আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

না.গঞ্জে রোগী সেবার নামে প্রতারণা, ড্রাগলাইসেন্স ছাড়া ফুড সাপ্লিমেন্টের কোটি টাকার ব্যবসা!

না.গঞ্জে রোগী সেবার নামে প্রতারনা
না.গঞ্জে রোগী সেবার নামে প্রতারনা

ছবি, নারায়ণগঞ্জ শহরের পপুলার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ শহরের পপুলার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারসহ নামি দামি অনেক ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে ডাক্তারদের ম্যানেজ করে ফুড সাপ্লিমেন্ট এর পরিবর্তে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে হাতে তৈরী দামি ভিটামিন বড়ি। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে বহুদিন যাবৎ এ ধোঁকাবাজির ব্যবসা করে আজ কোটিপতি প্রতারক চক্র। বিদেশী ক্যাপসুলের অনুরুপ মোড়ক ব্যাবহার করে তার মধ্যে শুধু হাতে তৈরী ভিটামিন প্যাক করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এমনই অভিযোগ করেছে ভুক্তভুগি সাধারন মানুষ।

অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, কৌশল করে কিছুদিন পরপর ভিটামিন (ফুড সাপ্লিমেন্ট) এর নাম পরিবর্তন করে চলছে এ ব্যবসা। হিল্লোক ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি ফুড সাপ্লিমেন্ট এর ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে ওডিসি+, হিলমিন, ইকোসেল ও ভিকিউ+ নামে ভিটামিন বাজারে বিক্রি করা হতো। পরবর্তিতে কয়েকবার নাম পরিবর্তন করে। বর্তমানে নতুন করে জাভামেক্স, টোকোছ, ফিলকক্সেন, ভিআরএক্স, ৩ফোর্ট এবং জিসিপ্লেক্স নামে পপুলার সহ সর্বত্রই বাজারজাত করছে। প্রত্যেকটি ভিটামিন ফাইলের নূন্যতম দাম ৭ শ’ টাকা হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিয়মিত ডাক্তারদেরকে কমিশন দেয়া হয় রোগিদের চিকিৎসা পত্রে এসকল ভিটামিন কিনে খাবার জন্য। এক কথায় সাধারন মানুষকে ঠকানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আলম নামের এক অসাধু ব্যবসায়ি ভুয়া ড্রাগ লাইসেন্স ব্যবহার করে বহুদিন যাবৎ এই প্রতারনা করে আসছে। ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ও ডাক্তারদের ম্যানেজ করে বর্তমানে কোটিপতি এই আলম। বেসকারীভাবে ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, কনসালটেশন সেন্টার ও হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ মানুষ যায় উন্নত চিকিৎসা সেবার জন্য। কিন্তু তারা না জেনেই হচ্ছে প্রতারিত। শহরের চাষাড়ায় অবস্থিত পপুলার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে দির্ঘদিন যাবৎ চলছে এ প্রতারনা।

আলমের মত এমন আরো কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সম্পূর্ন অবৈধভাবে হাতে তৈরী এসব ঔষধ বিক্রি করে এখন কোটিপতি। শহরের বিবি রোডে পপুলার ডায়াগনোষ্টিক এন্ড কনসালটেন্ড সেন্টারের ডাক্তারদের পরামর্শে রোগীরা খাচ্ছেন এসব ভিটামিন ট্যাবলেট।

আমদানীকৃত বিদেশি ভিটামিন ক্যাপসুলের নামে অবৈধ হাতের তৈরী সাদা বড়ি (ট্যাবলেট) খেয়ে প্রতারনার শিকার অসুস্থ্য রোগীরা। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় মানুষকে অন্ধকারে রেখে চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে প্রতারিত হচ্ছে হাজারো মানুষ। ভিটামিনের নামে সাদা পাউডারের ট্যাবলেট খাচ্ছেন সাধারন মানুষ। তাও আবার উচ্চমূল্যে বিদেশি ঔষধের নামেই কিনে খাচ্ছেন রোগীরা। সাধারনত

যে ডাক্তাররা বেশী রোগী দেখেন তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। ডাক্তারদের সহযোগিতায় অনেকদিন যাবৎই চলে আসছে মারাত্ত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই ব্যবসা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পপুলার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার ছাড়াও সরকারী হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসকই প্রেসক্রিপশনে লিখছেন এসব ভিটামিন। প্রকৃত পক্ষে ডাক্তাররাও

যাচাই না করে শুধু মাত্র কমিশনের লোভে রোগীদের খেতে বলছেন এসব মানহীন অস্বাস্থ্যকর ঔষধ। এতে সাধারন মানুষ না জেনে এ প্রতারানার শিকার হচ্ছেন। লাভবান হচ্ছেন ঠকবাজ অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিদেশী ক্যাপসুলের অনুরুপ মোড়ক ব্যবহার করে তার মধ্যে শুধু হাতে তৈরী ভিটামিন প্যাক করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অবাধে।

এ বিষয়ে হিল্লোক ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক আলমের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পপুলার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের ব্যাবস্থাপক (ম্যানেজার) শহিদুল ইসলাম স্বপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ফার্মেসিতে ফুড সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন বিক্রি হয়না। পপুলারের ডাক্তার যদি কেউ এগুলো লিখে সেটা তার ব্যাপার।
এ বিষয়ে ল্যাবএইড ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক সোহেল বলেন, আমাদের ফার্মেসি সরকার অনুমোদিত মডেল ফার্মেসি। আমাদের ডাক্তার কেউ এসব ভিটামিন লিখেননা। এসব ঔষধ আমাদের ফার্মেসিতে বিক্রি করা হয়না।

এবিষয়ে জেলা ড্রাগস সুপারেন্টেন্ডেন্ট ইকবাল হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসকল ভিটামিন ফুড সাপ্লিমেন্ট এর ড্রাগ লাইসেন্স নাই। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। কিছুদিন পূর্বে চিটাগাংরোডে বিপুল পরিমান লাইসেন্সবিহীন ঔষধ জব্দ ও জরিমানা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরেও জটিকা অভিযান করা হবে।